টেকেরহাট (মাদারীপুর) প্রতিনিধি ॥
মাদারীপুরে বালু ব্যবসার দ্বন্দের জেরে দুইভাইসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৭জন। এলাকাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। আটক করা হয়েছে দুইজনকে। নিহত সাইফুল সরদার (৩০) ও তার বড় ভাই আতাউর সরদার (৩৫) সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের খোয়াজপুর-টেকেরহাট এলাকার আজিবর সরদারের ছেলে এবং মুজাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার। গুরুতর আহতরা হলেন, সাইফুলের ভাই অলিল সরদার (৪০), প্রতিবেশি মুজাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (১৭), আজিজুল হকের ছেলে তাজেল সরদার (১৮)। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার খোয়াজপুর সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুরে কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদার। এ নিয়ে দ্বন্দ হয় একই এলাকার শাজাহান খানের সাথে। এরই জেরে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খোয়াজপুর সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সামনে একা পেয়ে সাইফুলের উপর হামলা চালায় শাজাহানের লোকজন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাইফুলের বড়ভাই আতাউর ও চাচাতো ভাই অলিল ও প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসে। এ সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয় সাইফুল (৩০) ও তার বড়ভাই আতাউর সরদারকে (৩৫)। আহত হয় অন্তত ৭ জন। তাদেরকে উদ্ধার করে ভর্তি করা ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে পাঠানোর । ঢাকা মেডিকেলে পাঠানোর পথিমধ্যে পলাশ সরদারের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে সদর উপজেলার খোয়াজপুর টেকেরহাট এলাকার মোলল্লা বাড়ি ও সরদার বাড়ির মাঝখানে ড্রেজারে বালু তোলার পাইপ নিয়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার জের ধরেই শনিবার সকালে মোল্ল¬া বাড়ির লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সরদার বাড়িতে হামলা চালায়। প্রতিপক্ষের হামলা থেকে বাঁচতে নিহত সাইফুল ও তার আরও দুই ভাই বাড়ির সামনে একটি মসজিদে ঢুকে আশ্রয় নেয়। পরে হামলাকারীরা মসজিদের মধ্যে ঢুকে তিন ভাইকে কুপিয়ে জখম করে। এতে ঘটনা ঘটনাস্থলে উক্ত দুই ভাই নিহত হয় । এ সময় তাদের উদ্ধারে এগিয়ে এলে হামলায় আহত হয় আরও ৭জন। পরে হামলাকারীরা আতাউর ও সাইফুলের বসতঘর ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আতাউল ও সাইফুলের লাশ উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।
মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাহিদা আক্তার বলেন, ‘হাসপাতালে দুজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। এ ঘটনায় আহত আরও তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাতক চাকমা (সদর সার্কেল) বলেন, এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ। নিহত সাইফুলের বিরুদ্ধে ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশী টহল ও অভিযান জোড়দার করা হয়েছে। অপরাধীরা শিগগিরই ধরা পড়বে।
Leave a Reply