নিত্যানন্দ হালদার,মাদারীপুর॥
বৈশি^ক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আসন্ন শারদীয়া দুর্গোৎসবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির ২৬দফা নির্দেশনা মেনে পূজার প্রস্তুতি চলছে। চলছে প্রতিমা শিল্পীদের প্রতিমা গড়ার কাজ।এবছর মাদারীপুরের ৪টি উপজেলায় ৪৪২টি পূজা মন্ডপে চলছে প্রতিমা শিল্পীদের রং তুলির আচর ও সাজ সজ্জা।দম ফেলার ফুসরত নেই প্রতিমা গড়ার কারিগরদের।গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্রতিমায় দোমাটি ও রং তুলির কাজ।গত বছরের চেয়ে এ বছর মাদারীপুরে পূজা মন্ডপের সংখ্যা কমেছে ৩টি।মাদারীপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগন অন্যান্য বছর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পূজা উদযাপন করলেও এ বছর করোনা ভাইরাসের কারনে সাদা মাটা ভাবেই ঢাকের তালে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘœ করতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ মাদারীপুর জেলা শাখা,হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান ঐক্য পরিষদ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে ১১ অক্টোবর রবিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের সাথে তার কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুব হাসানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অপরাধ) মোঃ আব্দুল হান্নান,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ডিএসবি) চাই লাউ মারমা,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর মোঃ মনিরুজ্জান ফকির, মাদারীপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক প্রানতোষ মন্ডল,বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাবুল দাস,রাজৈর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এ্যাড.শম্ভূনাথ পান্ডে,নবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান বিভূতি ভূষণ বাড়ৈ,শ্যামা প্রসাদ পাল,নিত্যানন্দ হালদার প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় জেলার ৪ উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মাদারীপুরে শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ১৩অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড.রহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুব হাসান,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোঃ আজাহারুল ইসলাম,মোহাম্মদ আবেদ আলী,মাদালীপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোঃ শাজাহান খান,মাদারীপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, মাদারীপুর শ্রী শ্রী প্রণব মঠের অধ্যক্ষ স্বামী সত্যপ্রিয়ানন্দজী মহারাজ,বিশ^জিৎ বৈদ্য নাদিম,মনি সুশিল কুমার সরকার ও সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
জানা গেছে,আসন্ন শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে মাদারীপুরের মন্দির ও পূজা মন্ডপগুলো সাজানোর কাজ চলছে। চলতি বছর জেলার সর্বাধিক পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজৈর উপজেলায়।এ বছর রাজৈর উপজেলায় ২৪৫টি পূজা মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।এছাড়াও জেলার শিবচরে ৬৩টি,কালকিনিতে ৬৩টি ও সদরে ৭০টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ৪৪২টি পূজা মন্ডপের মধ্যে ৯৫টি পূজা মন্ডপ অধিক ঝুকিপূর্ণ,২২১টি কম ঝুকিপূর্ণ ও বাকি মন্ডপগুলো সাধারন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। অধিক ঝুকিপূণ মন্ডপগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা এবং কম ঝুকিপূর্ণ মন্ডপগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি আইন শৃংখলা বাহিনী কাজ করবে বলে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে জানা গেছে।
ইতোমধ্যেই মন্ডপের প্রতিমাগুলোতে মাটির কাজের পাশাপাশি চলছে মন্ডপ ও গেট সাজ সজ্জার কাজ। একেক মন্দিরে ভিন্ন ভিন্ন সাজে সাজানো হচ্ছে প্রতিমা। যার যেমন সাধ্য সেমতে চলছে সাজসজ্জা।পূজা সফল ও নির্বিঘেœ সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকা করে চলছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অনুদান বরাদ্দের কাজ।পূজা মন্ডপগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে আইন শৃংখলাবাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলে জানা গেছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক প্রানতোষ মন্ডল জানান,এ বছর মাদারীপুর জেলায় ৪৪২টি মন্ডপে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির ২৬ দফা নির্দেশনা মেনে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।গত বছরের চেয়ে এ বছর ৩টি পূজা মন্ডপের সংখ্যা কমেছে। বৈশি^ক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমন রোধে ২৬ দফার পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা মেনে মায়ের আরাধনা করার আহবান জানান তিনি।
মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুব হাসান জানান, দুর্গা পূজা নির্বিঘœ করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। পূজা মন্ডপগুলোতে যাতে বিশৃংখলা ঘটাতে না পারে তার জন্য আইন শৃংখলা বাহিনীর মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করবে।স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল পূজারীদেরদে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের আহবান জানান পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসক ড.রহিমা খাতুন বলেন, দুর্গা পূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলায় এ বছর ৪৪২টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
শারদীয়া দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের মধ্যে দিয়ে বৈশি^ক মহামারী করোনা ভাইরাস দূর হয়ে পূজারীদের মনে বিরাজ করবে মাতৃ আরাধনার অফুরন্ত শক্তি এটাই কামনা মাদারীপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের।
Leave a Reply